নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

শ্রমিক নেতা করিম চৌধুরী। ছবি-বাংলাদেশ প্রতিদিন।
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয়ানদের সংগঠিত করে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম করার অভিপ্রায়ে প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যালায়েন্স ফর সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ (অ্যাসাল)-এর জাতীয় কমিটির সেক্রেটারি মো. করিম চৌধুরী নিউইয়র্কের স্ট্যাটান আইল্যান্ডের ‘সেরা ক্ষমতাধর ১০০’ এর একজন হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। মর্যাদাকর রাজনৈতিক জার্নাল ‘সিটি অ্যান্ড স্টেড অব নিউইয়র্ক’ প্রণীত ২০২৩ সালের এই তালিকায় উঠে এসেছে তাঁর নাম। নিউইয়র্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের একজন হিসেবে নির্বাচিত করিম চৌধুরী এর আগে ২০২১ এবং ২০২২ সালেও এই তালিকায় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণএশীয় তথা অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপের সঙ্গে বৈষম্য ও অন্যায্যতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কাজ করছেন করিম চৌধুরী।
১৯৯৭ সাল থেকে করিম চৌধুরী নিউইয়র্কের শিক্ষা দফতরে সরকারি কর্মচারি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে নিউইয়র্কের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এবং শ্রমিক নেতা হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। নিউইয়র্ক স্টেট পাবলিক এমপ্লয়ি ফেডারেশন-এনওয়াইএসপিইএফ এর নির্বাহী বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক স্টেটের ৫৫০০০ কর্মীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মৃদুভাষী এই বাংলাদেশি সংগঠক।
একজন রেজিটার্ড ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে বিশেষ করে স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখেন করিম চৌধুরী। স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টির লেবার চিফ তিনি। ২০১৯ সালে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ডেলিগেট হওয়ার সুযোগ পান করিম চৌধুরী। নিউইয়র্কের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। ইউএস কংগ্রেসনাল অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু জাতীয় ও স্টেট পর্যায়ের পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, পেয়েছেন অনেক প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন। অসংগঠিতদের সংগঠিত করা ও বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার কারণেই এসব স্বীকৃতি মিলেছে করিম চৌধুরীর।
প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসেন করিম চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই তিনি এ দেশে পাড়ি জমান। নিউইয়র্কে পৌঁছে করিম চৌধুরী স্যাটেন আইল্যান্ডে বসবাস শুরু করার পর থেকেই দক্ষিণ এশীয়দের সংগঠিত করতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি কাজ শুরু করেন নিম্ন-আয়ের ইমিগ্র্যান্টদের পরিবারগুলোর সঙ্গে। তারা যাতে ভালো মজুরির কাজ পেতে পারেন এবং দারিদ্রদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন সেটাই ছিলো তার লক্ষ্য। সরকারি ও বেসরকারি খাতে যাতে ভালো মজুরির কাজ পাওয়া যায় সে জন্য বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে চেষ্টা করতে তিনি এই মানুষগুলোকে উদ্বুদ্ধ করেন। স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের অভিবাসী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তারা যেনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন সে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। করিম চৌধুরীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চেষ্টায় অনেকে ট্যাক্স থেকে সুবিধা নেওয়া মানুষ নিজেই ট্যাক্স জেনারেটরে পরিণত হন। কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে তাদের বিরাজমান সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে পারার মধ্যেই নিজের কাজের আনন্দ খুঁজে নেন করিম চৌধুরী। কমিউনিটির মানুষগুলো যাতে কাজ খুঁজে পান সে জন্য তাদের রেজুমি তৈরি করে দেওয়া, কাজের জন্য আবেদন, কাজের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগগুলো নিশ্চিত করেন। আর এসব কারণে গোটা সংখ্যালঘু গ্রুপের মধ্যে তিনি সুপরিচিত। ২০০১ সালেই করিম চৌধুরী নিউইয়র্ক সিটি সিভিল সার্ভিস সিস্টেমে যোগ দেন এবং এনওয়াইসি লোকাল ৩৭১ এর সক্রিয় সদস্য হন। একজন সক্রিয় ইউনিয়ন মেম্বার হিসেবে নিজের ইউনিটে সদস্যদের সংগঠিত করা শুরু করেন। ২০০৭ সালে নিউইয়র্ক স্টেট সিভিল সার্ভিস সিস্টেমে যোগ দেন তিনি। এবং দ্রুতই নিউইয়র্ক স্টেট পাবলিক এমপ্লয়ি ফেডারেশন (পিইএফ) এর সক্রিয় সদস্য হন। ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পিইএফ ডিভিশন ৩৪৯ এর কাউন্সিল লিডার। পরে জয়েন্ট অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পান। স্টেট এজেন্সিগুলোয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক স্টেট, ডিএইচআর ও ইইওসিতে দায়ের করা মামলা ও অসন্তোষ পর্যালোচনা করাই ছিলো তার দায়িত্ব। নিউইয়র্ক সিটি সেন্ট্রাল লেবার কাউন্সিলে পিইএফ’র প্রতিনিধিত্ব করেন করিম চৌধুরী।
করিম চৌধুরী ২০১৮ সালে এডি ৬১’র জুডিশিয়াল ডেলিগেট নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে পুননির্বাচিত হয়ে এখনো সেই পদে রয়েছেন। এনওয়াই কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট ১১ এর পক্ষ থেকে তিনি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেন।
এছাড়াও করিম চৌধুরীর ডাক পড়ে স্টেটওয়াইড লেবার ম্যানেজমেন্ট ও হেলথ অ্যান্ড সেফটি কমিটিগুলোর বৈঠকে। সেখানে তিনি পিইএফ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরাজমান সংকটগুলো নিরসনে দায়িত্ব পালন করেন। একজন আত্মনিয়োজিত শ্রমিক নেতা ছাড়াও তিনি সফল কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে গোটা নিউইয়র্কে তার পরিচিতি রয়েছে। বিভিন্ন অংশগ্রহণ ও অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে তিনি সমস্যাগুলোর গুরুত্বানুসারে সমাধানের পথ নির্দেশ করেন।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের এই পথ পরিক্রমায় ২০১৫ সালে করিম চৌধুরী অ্যাসালে যোগ দেন। সে বছর দক্ষিণ এশিয়ান আমেরিকান শ্রমিক জোটের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন তিনি। এখানে অ্যাসালের ব্যানারে দক্ষিণ এশীয়দের সংগঠিত করতে থাকেন এবং তাদের মধ্যে একটা শক্ত মোর্চা গঠন করেন। ক্রমেই স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে অ্যাসাল।
করিম চৌধুরীর তুলনাহীন নেতৃত্ব প্যানডেমিকের সময়টিতে তাকে দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটিতে আরও সুপরিচিত করে তোলে। নিউইয়র্কসহ অন্য স্টেটেও দক্ষিণ এশীয় নেতাদের কাছে পরিচিতি পান তিনি। এর আগে ২০১৬ সালেই অ্যাসাল’র ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান এবং নিউইয়র্কে পাঁচটি ও নিউজার্সির একটি চ্যাপ্টারের নেতৃত্ব তার হাতে আসে। জাতীয় প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিনের সার্বিক নির্দেশনায় এবং তার নেতৃত্বে অ্যাসালের নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডি.সি, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা ও মিশিগানে ২০টি চ্যাপ্টার গড়ে ওঠেছে। নিয়মিত তিনি এসব স্টেটে সফর করে সেসব কমিউনিটিতে কণ্ঠস্বর জাগ্রত করে তুলতে কাজ করেন।
মোহাম্মদ করিম চৌধুরীর বড় ছেলে ফাতিন ইফতেখার (২২) ব্রুকলিন টেকনিক্যাল হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কিউনির হান্টার কলেজ থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন। ছোট ছেলে ফাতিন ইশতিয়াক (১৯) হাইস্কুল শেষ করেন স্টাটেন আইল্যান্ড টেকনিকাল হাই স্কুল থেকে এবং বর্তমানে ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর করছেন। তার মেয়ে মানহা কারিমা মাহজাবিন (১১) আইএস ২৭ এর সিক্স গ্রেডার। তার স্ত্রী ফারহানা আহমেদ এনওয়াইসি সিভিল সারভেন্ট হিসেবে কর্মরত। এবং এনওয়াইসি ১৫৪৯ এর সদস্য।

Posted ২:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৩
nypratidin.com | Nabil Nizam







আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
| Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | ||||||
| 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
| 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
| 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
| 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
| 30 | ||||||

