
নিজস্ব প্রতিনিধি | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
হৃদয়ে লাল-সবুজের পতাকা লালনকারি চট্টগ্রামের সন্তান পার্থ গুপ্ত সুদূর এ প্রবাসে পাড়ি জমিয়েই বাঙালি সংস্কৃতির বিশুদ্ধ ধারায় আত্মনিয়োগ করেছেন। সময়ের ব্যবধানে এখন তা পার্থ’র আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে অন্যতম একটি অবলম্বনে পরিণত হয়েছে। কী-বোর্ড শিল্পী হিসেবে শুধু বহুজাতিক সমাজে নিজেকেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, আরো চার মিউজিশিয়ানকে নিয়ে গড়েছেন ‘মাটি ব্যান্ড’। নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসি-টেক্সাস-ফ্লোরিডা-মিশিগান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বাংলাদেশী অধ্যুষিত প্রতিটি জনপদে ‘মাটি ব্যান্ড’র কদর বেড়েছে।
ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের অনুষ্ঠানকে জমিয়ে তুলতে ডাক পড়ছে ‘মাটি ব্যান্ড’র। বাংলাদেশের রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফেরদৌস আরা, ফরিদা পারভিন, রফিকুল ইসলাম, এ্যান্ড্রু কিশোর, সুবীর নন্দি, কুমার বিশ্বজিৎ, কনকচাঁপা, রিজিয়া পারভিন, তপন চৌধুরী, রবী চৌধুরী, বেবী নাজনীন, নগর বাউল জেমস, ভারতের মান্না দে, বাপ্পি লাহিড়ী, মিতালী মুখার্জি, কুমার সানু, ¯^দেশ বুশরা, মহালক্ষী আয়ার, কুনাল গাঞ্জাওয়ালা, সাধনা সরগম, সারেগামাপা’র অসংখ্য গায়কসহ দুই বাংলার জনপ্রিয় প্রায় সকল কন্ঠশিল্পীর সাথে ‘মাটি ব্যান্ড’ ২০০৬ সাল থেকে হাজারো কনসার্টে ছিল।
উদ্যমী-সদালাপি পার্থ গুপ্ত সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডেই থেমে নেই, তিনি হোমকেয়ার সার্ভিসেও আতœনিয়োগ করেছেন। গঠন করেছেন ‘পিজি প্রডাকশন হাউজ’। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান,নেপালের নানা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিচ্ছেন। পারফর্ম করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেড়িয়ে কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং দুবাইতেও। পার্থ গুপ্ত চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ২০০৬ সালে। প্রথম তিনমাস নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে পরিচিত একজনের গিফট শপে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। এরপর আর অন্যকোন দিকে মনোনিবেশের প্রয়োজন হয়নি। মাতৃভ’মি বাংলাদেশের কালচারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর ধারণা-‘মিউজিকে মানবিকতার অসম্ভব একটি ছোঁয়া পরিস্ফুট হয়-তা আন্তরিকতায় পরিবেশিত হলে’। এজন্যেই ভিন্ন ভাষার মানুষের কাছেও বাঙালি কালচারের কদর বেশী। যেমনটি হরদম দেখা যাচ্ছে ‘হিন্দি নাচ আর গানে’।
২০১০ সালে চট্টগ্রামে ফিরে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পুনরায় নিউইয়র্কে আসার পরও থামেননি এই মিউজিশিয়ান। সমানতালে কাজ করছেন। ‘মাটি ব্যান্ড’এ রয়েছেন রাকেশ (পার্কেশন), রিচার্ড (ডাম), জোহান ও মাহফুজ (গিটার)। এই টিম নিজেরা পারফর্ম করার পাশাপাশি মিউজিশিয়ান ও সিঙ্গার হতে আগ্রহীদেরকেও ট্রেনিং দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ জাগতিক নিয়মে তারা যখন কাজ করতে সক্ষম হবেন না তখোন যেন মিউজিক থেমে না থাকে।
আমেরিকা অঞ্চলে বাঙালি কালচারের হাল-হকিকত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ সংবাদদাতাকে পার্থ বলেন, ১৭ বছরের প্রবাস জীবনে কতকিছুই দেখলাম। কম্যুনিটির প্রায় প্রতিটি সংগঠনের সাথেই কমবেশী সম্পর্ক রয়েছে। নেতৃত্বে থাকা লোকজনের মধ্যে সবসময় দেখে আসছি অগাধ দেশপ্রেম। বিশেষ করে বাংলা গান, নাচের প্রতি অফুরন্ত আগ্রহ। এবং অনেকেই শালিনতায় বিনোদনে আগ্রহী। বিশুদ্ধ সঙ্গীত চর্চাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। এমন একটি আন্তরিক আগ্রহে তাড়িত হয়েই আমি কাজ করছি। ফলে কখনোই হতাশ হতে হয়নি। পার্থ বলেন,যতদিন মিউজিশিয়ান হিসেবে কাজের সক্ষমতা থাকবে-ততদিন বাঙালিত্ব বিসর্জন দিয়ে অন্যকিছু করবো না। বাংলা গান যথাযথভাবে উপস্থাপিত হলে ভিন্ন ভাষার মানুষের হৃদয়ও জয় করা সম্ভব হয়। কারণ, সুর-তাল-লয় খুব সহজে হৃদয় স্পর্শ করতে সক্ষম।
দীর্ঘ এই সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে পার্থ’র। তিনি বললেন, তবে আমাদের ‘মাটি ব্যান্ড’কে ঠকাতে যেয়ে অনেক সময় আয়োজকরাও ঠকেছেন। আবার কখনো কখনো কোন কোন আয়োজক সংগঠনের প্রধান আমাদের সাথে, এমনকি খ্যাতনামা শিল্পীদের সাথেও প্রতারণা করেছেন। পার্থ উল্লেখ করেন, সবস্থানেই ভাল-মন্দ রয়েছে। তবে ভালো মানুষই বেশী আমাদের কম্যুনিটিতে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা ভাষা ও নাচ-গান শেখানোর বেশ কটি প্রতিষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে পার্থ বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে বিত্তবানদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। কম্যুনিটি যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে বাঙালি চেতনাকেও লালন করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতি বহুজাতিক এ সমাজে যত সমৃদ্ধি পাবে, ততই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
পার্থ জানালেন, গত ১৫ বছরে কমপক্ষে ১২০০ অনুষ্ঠানে বাজিয়েছি। ফলে সবধরনের দর্শক-শ্রোতার অনুভূতি সম্পর্কে সম্যক একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। সকলেই বাংলা মিউজিক ভালোবাসেন, তারিফ করেন। এটি হচ্ছে আমার এবং মাটি ব্যান্ডের এগিয়ে চলার মূল প্রেরণা। আর এই উৎসাহে যুক্ত হয়েছে কম্যুনিটির বিভিন্ন পর্যায় থেকে ‘এওয়ার্ড প্রাপ্তি’র ঘটনা।
এক সময় নিজেও গান করেছেন পার্থ। তারপর কী-বোর্ড শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠায় এখন আর কন্ঠ দিতে চান না। অতি সম্প্রতি কুইন্সের হিলসাইড সংলগ্ন ফ্লোরাল পার্কে বাড়ি ক্রয় করেছেন পার্থ। সেখানে স্ত্রী পাপিয়া গুপ্তা, দুই পুত্র প্রিয়ম আর প্রিয়ান এবং মাকে নিয়ে সুন্দর সংসার গড়েছেন পার্থ। মাঝেমধ্যে কম্যুনিটির সঙ্গীত প্রিয় মানুষদের জন্যে নিজ বাসাতেও মনোজ্ঞ আয়োজনে দ্বিধা করেন না। তিনি জানালেন, শীতের মধ্যেই বাসায় ‘গজল সন্ধ্যা’ করবেন। সেখানে খ্যাতনামা শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রিয়-পরিচিতজনদের নিয়ে রাতভর গজল শোনাবেন।
Posted ১১:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
nypratidin.com | Sharif Khan
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | ||||
4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 |
11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 |
18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 |
25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 |