
আশরাফ আহমেদ | সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪ | প্রিন্ট
সে এক বিরল ঘটনাচক্রের আকস্মিক মিল! গত ২৬শে মার্চ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের বন্দর নগরী বল্টিমোরে এক মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় দেড় মাইলের বেশি লম্বা ‘ফ্রান্সিস স্কট কি’ সেতুটি ভেঙে পড়েছে। ১৯৭১ সালে এই বন্দরে নোঙর করা অস্ত্রবাহী পাকিস্তানি এক জাহাজকে ঘিরে ফেলেছিলেন আমার কিছু শ্রদ্ধেয়, অকুতোভয় ব্যক্তি। আমার ছোটোছেলে বল্টিমোরে থাকে। দৈনিক তিরিশ হাজারের অধিক যানবাহন পার হওয়া এই সেতুর ওপর দিয়ে বহুবার যাতায়ত করেছি বলে এই ভেঙে পড়ার কারণ সম্পর্কে কৌতুহল স্বাভাবিক। সেতুর নিচ দিয়েও নৌভ্রমণ করেছি কয়েকবার। বলা হচ্ছে এবং ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে সেতুর নিচে আসার কিছুক্ষণ আগে জাহাজের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন/সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে সমুদ্রগামী অতিকায় জাহাজটি তার দিক ও গতি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে সেতুর স্তম্ভে ধাক্কা দেয়।
দুর্ঘটনাটি শুধু বাল্টিমোর বন্দরই নয়, পুরো মেরিল্যান্ড রাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের যাতায়ত ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে চাপ ফেলবে। তাই জাহাজের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন ব্যহত হলো তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। আর এসব ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে, জন্ম নিয়েছে গুজবের। একটি গুজব হলো প্রেসিডেন্ট ওবামা দুর্ঘটনাটিকে সাইবার হামলার ফল হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন! ওবামা পরসু রাতেই নিউইয়র্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পুনর্নিবাচনী ফাণ্ডরেইজিং সভায় উপস্থিত ছিলেন। কাজেই কথাটিতে সত্য থাকলেও থাকতে পারে ভেবে গুগলে অনুসন্ধান করলাম। যা পেলাম তাতে শুধু গুজব নয়, এর সাথে বাংলাদেশের নামটিও যে জড়িত, তা স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
আসলে প্রেসিডেন্ট ও মিশেল ওবামা সম্প্রতি ‘লিভ দ্যা ওয়ার্ল্ড বিহাইন্ড’ নামে একটি ভবিষ্যতমুখী, নাসকতামূলক-রোমাঞ্চকর বা ডিস্টোপিক সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। অস্কার পুরস্কার বিজয়ী জুলিয়া রবার্টস অভিনীত ছবিটি গতবছর মুক্তি পেয়েছে। সেই সিনেমায় সাইবার হামলায় একটি অতিকায় জাহাজ তার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় সমুদ্রসৈকতে স্নানরতদের ওপর উঠে যায়। কিন্তু এক ব্যক্তি বল্টিমোরের ভেঙে পড়া সেতুটিকে সিনেমায় দেখানো সেতু বলে ফেসবুক পোস্ট দেয়। গুজব জন্মের শুরুটি হয়েছে এখানেই। ব্যাপারটি যে নিছকই গুজব তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তা বাংলাদেশের নামটি এখানে জড়ালো কীভাবে? না কোনো নিন্দনীয়ভাবে নয়, বরং ভালো অর্থে। সিনেমার ‘লিভ দ্যা ওয়ার্ল্ড বিহাইন্ড’বইটি লিখেছেন রুমান আলম নামে এক ব্যক্তি। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত বইটি নিউইয়র্ক টাইমস এর সর্বাধিক বিক্রিত। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী লেখক রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায়, যেখানে আমার বাস, ১৯৭৭ সালে এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, প্রায় চার দশক এই এলাকায় বাস করেও এই লেখক বা তাঁর পরিবারের কথা কিছুই জানি না বা শুনিনি। সংবাদে সিনেমা ও বইটি সম্পর্কে আলোচনা পড়ে বইটি কিনেছি বেশ কয়েকমাস হয়ে গেল। কিন্তু এখনও সিনেমা দেখা বা বইটি পড়ার সময় করে উঠতে পারিনি।
আমরা জানি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একজন বুভুক্ষু পাঠক। তিনি নিয়মিত তাঁর পছন্দের বই পড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রুমান আলমের বইটিও তাঁর ২০২১ সালের পছন্দের তালিকায় ছিল। তাঁর মতো ব্যক্তি বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত এক লেখকের বই পছন্দ করে সেটি সিনেমায় রূপ দিতে অর্থলগ্নি করেছেন তা আমাদের গর্ব করার বিষয়ই বটে।
৩০শে মার্চ, ২০২৪
Posted ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ এপ্রিল ২০২৪
nypratidin.com | Sharif Khan
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |