রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার মেজর থ্রেট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : পুতিন

বিশ্ব ডেস্ক   |   সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট  

রাশিয়ার মেজর থ্রেট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : পুতিন

টানা পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মস্কোর দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। আর এর মধ্যেই নতুন একটি নৌ-ডকট্রিন বা মতবাদে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন এই ডকট্রিনে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩১ জুলাই নতুন একটি নৌ ডকট্রিনে স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি আর্কটিক এবং কৃষ্ণ সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে রাশিয়ার বৈশ্বিক সামুদ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিন রাশিয়াজুড়ে ‘নৌবাহিনী দিবস’ উদযাপিত হয়। রাশিয়ায় ‘নৌবাহিনী দিবস’ সরকারি ছুটির দিন এবং ক্রিমিয়া ছাড়া এদিন দেশটিতে এই দিবস উদযাপন করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ উপলক্ষে সেন্ট পিটার্সবার্গের এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অবশ্য কৃষ্ণসাগর এলাকার রুশ নৌবহরের সদর দপ্তরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে ক্রিমিয়ায় নৌবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

জার পিটার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত সাবেক রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে রাশিয়াকে একটি বিশাল সমুদ্র শক্তি হিসাবে গড়ে তোলা এবং রাশিয়ান রাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থান বাড়ানোর জন্য পিটারের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

নৌবাহিনীর দপ্তর পরিদর্শন করার পর ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, রাশিয়ার হাতে অত্যাধুনিক জিরকন হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য যেকোনো আগ্রাসীকে পরাস্ত করার জন্য রাশিয়ার সামরিক শক্তি রয়েছে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

বক্তৃতার কিছুক্ষণ আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন ৫৫-পৃষ্ঠার নতুন একটি নৌ-তত্ত্বে বা নৌ মতবাদে স্বাক্ষর করেন। এই মতবাদে রাশিয়ার নৌবাহিনীর বিস্তৃত কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ‘মহান সামুদ্রিক শক্তি’ হিসাবে এর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে মস্কোর।

মতবাদে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মহাসাগরগুলোতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত নীতি এবং সামরিক জোট ন্যাটোর রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি গতিবিধি রাশিয়ার জন্য প্রধান হুমকি।

নতুন এই ডকট্রিনে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে উদ্ভূত সংকট নিরসনে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পন্থা কার্যকর না হলে রাশিয়া বিশ্বের সমুদ্রের পরিস্থিতির জন্য উপযুক্তভাবে তার সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে। যদিও বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার নৌবাহিনীর পর্যাপ্ত ঘাঁটি নেই বলে এই মতবাদে স্বীকার করা হয়েছে।

মতবাদ অনুসারে, ভারতের সাথে মস্কোর কৌশলগত ও নৌ সহযোগিতার পাশাপাশি ইরান, ইরাক, সৌদি আরব এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে বৃহত্তর সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নয়নই রাশিয়ার অগ্রাধিকার।

এতে বলা হয়েছে, ‘এই মতবাদ মেনে পরিচালিত হলে বিশ্বের মহাসাগরগুলোতে রাশিয়ান ফেডারেশন দৃঢ়ভাবে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে এবং পর্যাপ্ত সামুদ্রিক শক্তি থাকার বিষয়টি রাশিয়ার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেবে।’

পুতিনের বক্তৃতায় অবশ্য ইউক্রেনের সংঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে সামরিক মতবাদে কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগরে ‘রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ব্যাপক শক্তিশালীকরণের’ উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখানো হয়েছে।

ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পাঁচ মাস ধরে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে। এই মতবাদটি আর্কটিক মহাসাগরকেও রাশিয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বের এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলেছে যে, রাশিয়া আর্কটিক মহাসাগরকে সামরিকীকরণের চেষ্টা করছে।

রাশিয়ার ৩৭ হাজার ৬৫০ কিমি (২৩ হাজার ৪৯৯ মাইল) আয়তনের বিশাল উপকূলরেখা রয়েছে। এটি মূলত জাপান সাগর থেকে শ্বেত সাগর পর্যন্ত প্রসারিত। এছাড়াও এর মধ্যে কৃষ্ণ সাগর এবং কাস্পিয়ান সাগরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে অ্যাডমিরাল গোর্শকভ ফ্রিগেটে জিরকন হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ শুরু হবে। এসব অস্ত্র কোথায় মোতায়েন করা হবে তা নির্ভর করবে রাশিয়ার স্বার্থের ওপর।

রুশ প্রেসিডেন্টের ভাষায়, ‘এখানে মূল বিষয় হলো রাশিয়ান নৌবাহিনীর সক্ষমতা… যারা আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করবে, তাদের জন্য এটি বিদ্যুৎ গতিতে সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম।’

রয়টার্স বলছে, হাইপারসনিক মিসাইলগুলো শব্দের চেয়ে নয় গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে এবং রাশিয়া গত বছরজুড়ে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন থেকে জিরকনের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পরিচালনা করেছে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২

nypratidin.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর...

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আবু তাহের

নির্বাহী সম্পাদক : লাবলু আনসার