বিশেষ সংবাদদাতা | শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট

অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মসনদ হারালেও দলটির নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ প্রসারিত হয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। অর্থাৎ তারা কোনো উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারলেই রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন বলে অভিমত তাদের। অপরদিকে, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বিএনপি-এলডিপি-জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের এসাইলামের আবেদনের সিদ্ধান্ত কী হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, বেড়েছে সংশয়ও।
কারণ পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ক্ষমতায় আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ-প্রবন্ধ-নিবন্ধ থেকেই এসাইলাম অফিসার/ইমিগ্রেশন জজেরা অবহিত হচ্ছেন। যদিও বিএনপি/এলডিপি/জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বলে দৃশ্যমান কোনো ডক্যুমেন্ট নেই। এর ফলে সামনের নির্বাচন না আসা পর্যন্ত বিএনপি/এলডিপি/জাতীয় পার্টির কর্মীগণের ভাগ্য প্রসন্নই থাকবে বলে মনে করছেন খ্যাতনামা ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে অ্যাটর্নি কর্মকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার ঘটনাটি কারো অজানা নেই। এরপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের ছোট-বড়-মাঝারি নেতৃবৃন্দকে কী ধরনের দমন-পীড়ন আর নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার তথ্য-উপাত্ত থাকতে হবে। বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা লুটতরাজ করা হয়েছে-এর সমর্থনেও ডক্যুমেন্ট লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ না পেয়ে তাদেরকে যদি ফিরতে হয় তাহলে কী ধরনের ভয়ংকর/অমানবিক পরিস্থিতির ভিকটিম হতে হবে সেটিও অবলিলায় ব্যক্ত করতে হবে ইণ্টারভিউর সময়। তাহলে তাদের এসাইলাম গ্র্যান্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অ্যাটর্নি কর্মকার উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের এক বছরের মধ্যে এসাইলামের আবেদন করতে হয়। এটা বিদ্যমান রীতি। তবে কেউ যদি এই সময়ের আগে থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে থাকেন, তারা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন করতে পারবেন, সেটি একেবারে অগ্রহণযোগ্য কিংবা বিবেচনার বাইরে থাকবে না যদি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা বিবৃত করা হয় আবেদনের সময়। সবটাই নির্ভর করে পিটিশন সাবমিটের বিবরণীর ওপর। এজন্য অবশ্যই বিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে।
উল্লেখ্য, আবেদন সাবমিটের পর পাঁচ মাস সময় লাগবে ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর পেতে। এর আগে সাবমিশনের রিসিপ্ট কপি আবেদনকারীর বসবাসের অনুমতির সাক্ষ্য বহন করবে। অর্থাৎ আপনি একটি প্রসেসে আছেন, তাই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিরক্ত করতে পারবে না।
ইমিগ্রেশনে অভিজ্ঞ এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ‘ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ’ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এসাইলাম পাবেন যদি তাদের উপস্থাপনা সঠিক হয়। অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীও একইভাবে উল্লেখ করেছেন, এসাইলাম মঞ্জুরির জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে বিবৃত করা। আর তা যেন এসাইলাম অফিসার/ইমিগ্রেশন জজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। মামলা দায়ের হয়ে থাকলে তার কপি দরকার। পত্র-পত্রিকা/টিভিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কাটিং/ফুটেজ থাকলে আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কখনো যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন, সে তথ্য আরও ত্বরান্বিত করবে কর্তৃপক্ষকে সদয় করতে। মনে রাখতে হবে এসাইলামের আবেদন একবার নাকচ হয়ে গেলে তা দীর্ঘ বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। তাই শুরুতেই অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে দ্রততম সময়ে সাবমিট করা দরকার। সাবমিশনে যেন কোনো ত্রæটি বা ভুল তথ্য না থাকে।
ইমিগ্রেশনে স্বল্প সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জনকারি অ্যাটর্নি জান্নাতুল রুমা বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, জাসদ (ইনু), জাতীয় পার্টি (রওশন), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এসাইলামের আবেদন করার সময় যেন তা নিভর্‚ল ও ঘটনার ক্রমানুসারে সাজানো হয়।
অ্যাটর্নি রুমা উল্লেখ করেন, প্রথম ইণ্টারভিউয়ের তারিখ পেতেও সময় লাগে। তবে কতদিনের মধ্যে তার নিস্পত্তি হবে সেটি কেউই বলতে পারবো না। নির্ভর করে আবেদনের জটের ওপর।
বিএনপি, এলডিপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের পেন্ডিং আবেদনের সমস্যা হবার কথা নয়, পরিস্থিতি পাল্টালেও-এমন স্বস্তিদায়ক কথা বলেন অ্যাটর্নি রুমা। তিনি বলেন, আমার অনেক মক্কেল ছিলেন ভারতীয়। তারা বিজেপির সমর্থক হিসেবে আবেদন করেছিলেন। সে সব পেন্ডিং থাকাবস্থায়ই কংগ্রেস ক্ষমতা হারায় এবং বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়। সে সময় আমি ইমিগ্রেশন কোর্টকে কনভিন্স করতে সমর্থ হই যে, দীর্ঘদিন কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায় সর্বত্র তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের পাশাপাশি বদ মেজাজের সংগঠকও তৎপর রয়েছে। এরফলে এলাকায় ফিরলে আমার মক্কেলকে ভয়ংকর বিপদে পড়তে হবে-এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। অর্থাৎ বিজেপি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরও অনেক নেতা-কর্মীর এসাইলাম মঞ্জুর হয়েছে। বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতি যে বিরাজিত নেই-তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। বড় কথা হচ্ছে, প্রতিটি আবেদনই নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের পরিস্থিতির ওপর।
আবেদনকারি এলাকায় ফিরলেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অথবা অন্য কোনো প্রভাবশালী মহলের আক্রমণের শিকার হবেন এবং প্রাণ নাশের আশংকা প্রবল-এ বিষয়টি ইমিগ্রেশন কোর্টে উপস্থাপন করাই মূল কাজ। রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে আছে সেটি বিবেচ্য হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। অ্যাটর্নি রুমা জানালেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরও এলডিপির একজনের এসাইলাম মঞ্জুর হয়েছে, যিনি আমার মক্কেল ছিলেন।

Posted ৪:৫২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪
nypratidin.com | Nabil Nizam







আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
| Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
|---|---|---|---|---|---|---|
| 1 | ||||||
| 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
| 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
| 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
| 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
| 30 | ||||||

