সোমবার ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ৬৬

বিশ্ব ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট  

চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ৬৬

চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয় বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

ভূমিকম্পের পর আটকা পড়া শত শত মানুষকে উদ্ধার, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং জরুরি ত্রাণ পাঠানোর জন্য মঙ্গলবার উদ্ধারকারীরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় জখম হওয়া প্রায় আড়াই মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, এদের মধ্যে অনেকের আঘাতই গুরুতর।

রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুর্যোগ কবলিত এলাকায় আটকা পড়া দুই শতাধিক মানুষকে সরিয়ে আনতে উদ্ধারকারীরা কাজ করছেন। পাশাপাশি তারা টেলিযোগাযোগ সেবা, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনে কাজ করার পাশাপাশি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের খাবারের যোগান দিচ্ছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে টেলিযোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর পার্বত্য এলাকায় ভূমিধসের সৃষ্টি হয়, এতে ‘গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি’ হয়।

সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী শহর চাংদুতে কোভিড-১৯ জনিত লকডাউন চলার মধ্যেই ভূমিকম্পটি হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর শুক্রবার থেকে চাংদুর ২ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দাকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র চাংদু থেকে প্রায় ২২৬ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চল লুদিংয়ে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, ইয়ান শহরে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রতিবেশী গানসি প্রিফেকচারে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার রাতে সিসিটিভির খবরে বলা হয়, “আরও ১৬ জন নিখোঁজ রয়েছে এবং ৫০ জন আহত হয়েছে।”

বিবিসি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে চাংদু ও পার্শ্ববর্তী মেগা সিটি ছাংছিংয়ের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে।

ভূমিকম্পের কারণে গারস ও ইয়ান এলাকার কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়, জানিয়েছে সিসিটিভি।

রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম সিজিটিএনের ভাষ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্র লুদিংয়ে পাঁচশ জনেরও বেশি উদ্ধারকর্মী পাঠানো হয়েছে আরও শ্রমিকরা ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো পরিষ্কার করার কাজ করছেন।

মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রায় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমবাহ, সবুজ বন ও সুউচ্চ শিখরগুলোর জন্য পরিচিত জনপ্রিয় পর্যটন শহর হাইলুগোতে এখনও দুই শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের কাছে পৌঁছতে ভূমি ধসে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়কগুলো ফের চালু করতে উদ্ধারকারীরা কাজ করছেন।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র লুদিংয়ে বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও টেলিযোগাযোগ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ২৪৩টি বাড়ি ধসে পড়েছে ও ১৩ হাজার ১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারটি হোটেল ও শতাধিক রিজোর্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভূমিকম্পে সিচুয়ানের বেশ কয়েকটি শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বহু মহসড়ক ভেঙে পড়েছে এবং সাতটি মাঝারি ও ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে আগামী তিন দিন ধরে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পের পর কয়েকটি হ্রদের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, বিশেষজ্ঞরা সেখানে সতর্কতামূলক পতাকা উড়িয়ে দিয়েছেন।

ওয়ানডং নদীর উজানে ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করে দেখতে কর্তৃপক্ষ ড্রোন ওড়ানোর কথা বিবেচনা করছে। চাংদুর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ফোনে ভূমিকম্পের সতর্ক বার্তা পান তারা। এমন বার্তা পেয়ে আতঙ্কে অনেকেই তড়িঘড়ি করে সুউচ্চ ভবনগুলো থেকে রাস্তায় নেমে আসে।

লরা লুয়ো নামের একজন আন্তর্জাতিক জনসংযোগ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “অনেক লোক আতঙ্কে কাঁদতে শুরু করেন। কম্পন শুরু হওয়ার পর সবগুলো কুকুর একসঙ্গে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। পরিস্থিতি সত্যিই খুব ভীতিকর ছিল।”

চেন নামের চাংদুর এক বাসিন্দা বলেন, “চাংদু এখন মহামারীর ব্যবস্থাপনায় থাকায় বাসিন্দাদের তাদের আবাসিক এলাকার বাইরে যাওয়ার অনুমোদন নেই, অধিকাংশই তাদের উঠানে জড়ো হয়েছিল।”

এর আগে জুনে সিচুয়ানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল। তবে ২০১৭ সালের অগাস্টে সিচুয়ানের আবা প্রিফেকচারে হওয়া ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর এবারেরটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।

সিচুয়ান প্রদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্প একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চলে। শিংহাই-তিব্বতিয়ান মালভূমির পূর্ব সীমান্তের এই এলাকাটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় একটি এলাকা।

২০০৮ সালে সিচুয়ানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় ওয়েনচুয়ান কাউন্টিতে ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ৭০ হাজার মানুষ নিহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৩৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

nypratidin.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর...

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আবু তাহের

নির্বাহী সম্পাদক : লাবলু আনসার