
নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
এওয়ার্ড হাতে সুবীর চৌধুরী। ছবি-বাংলাদেশ প্রতিদিন।
অটোমোটিভ শিল্পে প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৭ অক্টোবর অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি আমেরিকান প্রকৌশলী গোটাবিশ্বে ‘টেক-গুরু’ হিসেবে পরিচিত সুবীর চৌধুরীকে ‘২০২২ এএসএমই সোইচিরো হোন্ডা’ এওয়ার্ড প্রদান করলো।
হোন্ডা মোটর কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা-শিল্পপতি সোইচিরো হোন্ডা স্মরণে ‘দ্য অমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স’ তথা এএসএমই এওয়ার্ডটির প্রবর্তন করেছে ১৯৮০ সালে অর্থাৎ হোন্ডা পরলোকগমনের ১০ বছর আগেই তাঁর প্রতি সম্মানসূচক এওয়ার্ড চালু করে গোটাবিশ্বের সেরা প্রকৌশলীগণের প্রতিনিধিত্বকারি এই এএসএমই। ইন্ডিয়ানাপোলিসে চারদিনব্যাপী আইসিই ফরওয়ার্ড কনফারেন্সের দ্বিতীয় রজনীতে তার হাতে এওয়ার্ড তুলে দেয়ার সময় আইস কনফারেন্সের চেয়ার ড. কেলী সিনেকাল বলেন, প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় সুদূর প্রসারি ভূমিকা অবলম্বনের মাধ্যমে জরাজীর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘুরে দাঁড়ানোই শুধু নয়, মুনাফা অর্জনের পথ সুগম করতে সুবীর চৌধুরীর পরামর্শ মার্কিন মুল্লুকের সীমানা পেড়িয়ে গোটাবিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই পুরস্কার তারই অন্যতম উদাহরন। সুবীর চৌধুরীর পরামর্শ পাওয়া কারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত গাড়ির গুণগত মানে যেমন খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে, একইসাথে বহুগুণে লাভের মুখ দেখছে।
তাঁর মত একজন মানুষকে এ স্বীকৃতি-সম্মাননা দিতে পেরে আমি এবং এএসএমই গৌরববোধ করছে। এ সম্মাননায় ভূষিত হওয়া অতীতের খ্যাতিমান ব্যক্তিগণের মধ্যে রয়েছেন উদ্ভাবক জন জে মতুনী এবং মানসম্পন্ন উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে আরেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব জোসেফ এম জুরান।
এওয়ার্ড গ্রহণের অনুভ’তি ব্যক্তকালে চট্টগ্রামের সন্তান সুবীর চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে বলেন, আমি খুবই সম্মানীতবোধ করছি এই মেডেল পেয়ে। এর ফলে কল-কারখানার এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে আমি আরো মৌলিক পরামর্শে উৎসাহিত হবো। যার সুফল হিসেবে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ বয়ে আনবে। উল্লেখ্য, সুবীর চৌধুরীর মালিকানাধীন মিশিগানভিত্তিক এএসআই কন্সাল্টিং গ্রুপ অপারেশনারল এক্সিলেন্স, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সাল্টিং ও প্রশিক্ষণের মতো কৌশলগত উদ্যোগে বিশ্বব্যাপি শীর্ষ সংস্থাগুলোর একটি।
এ বছরের ৫ এপ্রিল ‘সোসাইটি অব অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স’-এর(এসএই)মর্যাদাপূর্ণ ‘আর্নল্ড ডব্লিউ সাইগেল হিউম্যানিটারিয়েন’ সম্মাননা পেয়েছেন সুবীর চৌধুরী। মিশিগানের মোটর সিটি হিসেবে খ্যাত ডেট্রয়েটের গার্ডেন থিয়েটারে এসএই-র প্রেসিডেন্ট শ্রী শ্রীনাথ তার হাতে ঐ সম্মাননা তুলে দেন।
মৃৃদ্যুভাষী এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অকৃপণভাবে দরদী সুবীর চৌধুরীর পরামর্শ পেয়ে জরাজীর্ণ অনেক কর্পোরেশন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যমী যুব সমাজের মধ্যে তার স্টেম প্রচারের জন্য অসামান্য কাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈশ্বিক জনহিতকর কাজের কথাও এখন কর্পোরেট জগতে উচ্চারিত হচ্ছে।
সুবীর চৌধুরীর তার সিক্স সিগমা (প্রায় ৯৯ ভাগ ত্রুটিমুক্ত যন্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থাপনা) এবং সিক্স সিগমার জন্য ডিজাইন প্রক্রিয়ার উন্নতিতে অবদান এখন অনস্বীকার্য। এসএই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থা যেটি সারাবিশ্বে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় প্রকৌশলীদের পেশাদারি মান উন্নয়নে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যক্তি, সংস্থা, দল বা সত্তাকে সম্মাননা জানাতে ‘সাইগেল হিউম্যানিটারিয়েন অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।
সুবীর চৌধুরী গত এক দশকে তার ক্লায়েন্টদের জরাজীর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন এবং বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পথ দেখিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ‘থিঙ্কারস-ফিফটি’র মতে, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবস্থাপনা চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ইতিমধ্যেই সুবীর চৌধুরী নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তাকে ‘টেক-গুরু’ হিসেবেও অভিহিত করা হচ্ছে এই সেক্টরে।
ভারতের খড়গপুরে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) স্থাপন করেছে ‘সুবীর চৌধুরী স্কুল অব কোয়ালিটি অ্যান্ড রিলায়েবিলিটি’। এটি হচ্ছে সারাবিশ্বে প্রথম একটি শিক্ষালয় যেখানে গবেষণার গুণগত মান ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়।
আরো উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাঙালিদের জীবন ব্যবস্থা এবং বাঙালির উত্থানের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুবিধার্থে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে স্থাপিত হয়েছে ‘সুবীর অ্যান্ড মালিনি চৌধুরী সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ সেন্টার’। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এটি প্রথম একটি প্রতিষ্ঠান। ‘দ্য পাওয়ার অব সিক্স সিগমা’, ‘দ্য আইসিক্রিম ম্যাকার’, ‘দ্য ডিফারেন্স’ সহ ১৫টি বই লিখেছেন সুবীর চৌধুরী। এর সবকয়টি ভালো বিক্রি হয়েছে। এসব বইয়ের প্রশংসা ও কার্যকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস-সহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে।
সুবীর চৌধুরী বিশ্বব্যাপী সমাদৃৃত ১০টি পেশাজীবী সংগঠনের অনারারি সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ‘আউস্ট্যান্ডিং আমেরিকান বাই চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’, সোসাইটি অব ম্যানফ্যাক্চারিং ইঞ্জিনিয়ারর্স’ এর ‘গোল্ড মেডেল’, যুক্তরাজ্যের আইটি কর্তৃক ‘মেনস্ফোর্থ ম্যানুফ্যাক্চারিং গোল্ড মেডেল’সহ ডজনখানেক সম্মাননা পেয়েছেন এ বাংলাদেশি-আমেরিকান।
সম্প্রতি সুবীর চৌধুরীর সহযোগিতায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে।
Posted ১২:২১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২
nypratidin.com | Nabil Nizam
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |