
নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
কংগ্রেসে উত্থাপিত রেজ্যুলেশনে অসংখ্যবার ‘হিন্দু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি-বাংলাদেশ প্রতিদিন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাক হায়েনা এবং তাদের দোসরেরা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে তার স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে কংগ্রেসে উত্থাপিত রেজ্যুলেশনে (এইচআর ১৪৩০, ১৪ অক্টোবর-২২) বাঙালি থেকে হিন্দুদের আলাদা করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
অর্থাৎ পাকিস্তানী হায়েনারা হিন্দুস্থানের হিন্দুদেরকেও টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে মনে করার ক্ষেত্র তৈরী করা হয়েছে ঐ রেজ্যুলেশনে। এর ফলে রেজ্যুলেশনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তির কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকতে পারে-যা নিকট ভবিষ্যতে একাত্তরের গণহত্যার প্রসঙ্গটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া দূরের কথা, তা পাক-ভারত যুদ্ধের ডামাডোলে মিলিয়ে যাবার শংকা প্রবল হয়ে উঠতে পারে।
এহেন পরিস্থিতির আশংকায় এবং রেজ্যুলেশনের ভাষা সংশোধনের আহবানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বেশ কটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঐ রেজ্যুলেশনের কো-স্পন্সর কংগ্রেসম্যান রো খান্নার ক্যালিফোর্নিয়াস্থ ডিস্ট্রিক্ট অফিসের সাথে এক টেলি-কনফারেন্সে মিলিত হন। সমন্বয় করেন ‘বাংলাদেশি আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেস’ (বাপ) এর নওরীন আকতার।
উল্লেখ্য, মার্কিন কংগ্রেসে প্রগতিশীল গ্রুপের অন্যতম এবং খেটে খাওয়া আমেরিকানদের অধিকার-মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-করটেজের ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট ডাইরেক্টর হচ্ছেন নওরীন আকতার। অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র চ্যাপ্টারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটসের রিয়া চক্রবর্তী,বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসী গ্রুপের প্রকৌশলী কামাল আহমেদ, মুসলিম ভয়েসেস কোয়ালিশনের তাসনুভা খান এবং ইলহান ক্যাগরিল, নর্দার্ণ ক্যালিফোর্নিয়াস্থ বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক কোয়ালিশনের কাওসার জামাল, ‘বাংলাদেশী আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেস’ (বাপ) এর মৌমিতা আহমেদ, মুসলিম ফর প্রগ্রেসের সায়মা খন্দকার, ফারহানা ইসলাম এবং হ্যালা ওবায়েদ, কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স’র রবার্ট ম্যাককো।
সকলেই উল্লেখ করেছেন যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালিদের স্বাধিকারের এবং সেখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান সকলেই ছিলেন বাঙালি। বাঙালি হিসেবেই তারা পাক হায়েনাদের আক্রমণে ছিলেন। হত্যাযজ্ঞের অসহায় শিকার হয়েছেন। সম্ভ্রমহানীর টার্গেট ছিলেন বাঙালি রমনীরা। বাড়ি-ঘর লুন্ঠনের পর জ্বালিয়ে দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাঙালি হিসেবে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠি ইত্যাদির বালাই ছিল না। কারো গায়ে চিহ্নও ছিল না কে হিন্দু আর কে মুসলমান। ৩০ লাখ শহীদের মধ্যেও হিন্দু-মুসলমান একাকার ছিলেন। এমনকি পাক হায়েনাদের রুখে দেয়ার যুদ্ধেও সকলে ছিলেন পরস্পরের সহযোগী। বিষয়টি স্পর্শকাতরই শুধু নয়, এটি রেজ্যুলেশনের মৌলিক ইস্যুকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই সকলে অনুরোধ জানিয়েছেন রেজ্যুলেশন ফ্লোরে যাবার আগে যেন সংশোধন করা হয়।
কংগ্রেসম্যানের প্রতিনিধিত্ব করেন চীফ অব স্টাফ জিয়ো সাবা, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ ক্যাটে গোওল্ড এবং ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর টম পাউক। তারা সকলের বক্তব্য/মন্তব্য-অভিমত গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনেছেন। উল্লেখ্য, রেজ্যুলেশনটি শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরী মিক্স’র অফিসে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর যদি অধিবেশন বসে তাহলে হয়তো এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যথায় জানুয়ারিতে নতুন কংগ্রেসের আওতায় রেজ্যুলেশনটি পুনরায় উত্থাপিত না হলে তা আপনা-আপনি বাদ পড়ে যাবে। অর্থাৎ তা সংশোধনের যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে এবং এজন্যে উভয় কংগ্রেসম্যানের অফিসে দেন-দরবার করা জরুরী। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত টেলি-কনফারেন্সের আগে ওহাইয়োর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ স্যাবোটের অফিসেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। কাউকে পাওয়া যায়নি এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্যে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট ভারতীয় আমেরিকান রো খান্নার অফিসের কর্মকর্তারা ইস্যুটিকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
Posted ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২
nypratidin.com | Nabil Nizam
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 |
8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 |
15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 |
22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 |
29 | 30 |