
বিশেষ সংবাদদাতা | সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ | প্রিন্ট
দুলাল তালুকদার। ছবি-সংগ্রহ।
বুলবুল ললিতকলা একাডেমির খ্যাতনামা নৃত্যবিদ ও হার্ভার্ড স্কুল অব ড্যান্সের শিক্ষক বস্টন প্রবাসী দুলাল তালুকদার শনিবার ১১ মে ম্যাসাচুসেট স্টেটের বস্টন সিটির পার্শ্ববর্তী মেডফোর্ড শহরে নিজ বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী সাবিহা তালুকদার ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নিউ হ্যামশায়ারে বসবাসরত তার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক তালুকদার ১২ মে রাতে এ সংবাদদাতার কাছে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মোস্তাক তালুকদার আরো জানান যে, সোমবার দুলালের লাশ পাবার পরই জানাযা ও দাফনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
দুলাল তালুকদার বুলবুল ললিতকলা একাডেমির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাঙালি শিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। তিনি ছিলেন একাধারে নৃত্যশিল্পী, শিক্ষক, কোরিওগ্রাফার ও সংগীতজ্ঞ।
দুলাল তালুকদারের জন্ম ১৯৪৬ সালে কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁরা ঢাকায় চলে আসেন। সেই থেকে কমলাপুরের ঠাকুরপাড়ায় তাঁদের বসবাস। ছেলেবেলায় গান ও নাচ শেখার ঝোঁক ছিল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মশিউর রহমান তালুকদার, তমাল তালুকদারও দুলাল তালুকদারের ভাই।
১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে দুলাল তালুকদার যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসতি গড়েন। তিনি নাচের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), বোস্টন ইউনিভার্সিটি, বিশ্বখ্যাত লোকনৃত্যদল ‘মান্দালা’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তিনি দীর্ঘদিন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ড্যান্সের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তারপর দেশ-বিদেশে নাচ বিষয়ে পড়াশোনা ও নিবিড় চর্চায় মনোযোগ দেন। গত শতকের ষাটের দশকে সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন।
ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ইরানের বাদশাহ রেজা শাহ পাহলভি, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন দুলাল তালুকদার। তিনি সান্নিধ্য পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বখ্যাত ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, গজলসম্রাট মেহেদী হাসান, নৃত্যরানি সিতারা দেবী, উদয়শঙ্কর, পন্ডিত রবিশঙ্করসহ বহু গুণীর।
দুলাল তালুকদারের সৃজনশীল নাচের কম্পোজিশনে গভীর যত্ন, নিষ্ঠা, শৈল্পিক বোধসহ নানা আঙ্গিক ও শৈলী সার্থকভাবে ফুটে ওঠে। ‘আমি দুলাল তালুকদার’ নামে তাঁর জীবনস্মৃতি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা থেকে। বইটিতে স্থান পেয়েছে একটি রক্ষণশীল পরিবার ও সমাজের ব্যূহ ভেদ করে কিভাবে তিনি নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠলেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন, রয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা।
তখন সদ্যঃপ্রতিষ্ঠিত বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা) ভর্তি হতে উৎসাহিত করেন তাঁরই বড় ভাই গল্পকার ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এরপর বাফায় ভর্তি হওয়া এবং নাচ শেখা শুরু। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া বাফার নাচের ক্লাসে প্রথম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন মন্দিরা নন্দী, দুলাল তালুকদার ও রাহিজা খানম ঝুনু। তাঁদের নৃত্যগুরু অজিত সান্যাল ছিলেন নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর দলের অন্যতম সদস্য। ১৯৬৩ সালে নবাবপুর স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা কলেজে।
Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
nypratidin.com | Nabil Nizam
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |