
বিশেষ সংবাদদাতা | শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
সেলিম সাদ্দাম। ছবি-বাংলাদেশ প্রতিদিন।
আমেরিকায় মূলধারার রাজনীতিতে আরেক বাংলাদেশির উত্থান ঘটছে। ভার্জিনিয়ার সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে ৭ নভেম্বর নির্বাচিত হতে চলেছেন নোয়াখালীর সন্তান সাদ্দাম সেলিম (৩৩)। জানা গেছে, ওয়াশিংটন ডিসিসংলগ্ন ভার্জিনিয়া স্টেটের ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিসহ অ্যানান্ডেল, কিংস পার্ক, ওয়েস্ট স্প্রিঙফিল্ড, বার্ক, ফেয়ার ওউক্স, সেন্ট্রিভিলে নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার সিংহভাগ ভোটারই ডেমোক্র্যাট। ২০ জুন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে সাদ্দাম সেলিম জয়ী হয়েছেন। এখন শুধু ৭ নভেম্বরের আনুষ্ঠানিকতা। অর্থাৎ মার্কিন মুল্লুকে স্টেট সিনেটর হিসেবে বাংলাদেশি আমেরিকানের সংখ্যা হবে ৪ এবং স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভসহ সর্বোচ্চ পদে প্রবাসীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৫-এ। এ প্রসঙ্গে ১ নভেম্বর সাদ্দাম সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বহুজাতিক এ সমাজে রাজনীতিক হওয়ার মধ্যে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সেই ঝুঁকি সামলেই আগাতে হয়। আসলে জীবনে কিছু পেতে হলে রিস্ক নিতেই হবে। আমরা ইমিগ্র্যান্টরা শুধু আয়-উপার্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করি। কম্যুনিটিতে অনেক মেধাবি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, ইন্টেলের মত বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ এবং ইউটিউটের প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন আছেন। এমন খ্যাতিমান প্রবাসীরা যদি মার্কিন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন, তাহলে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় কম্যুনিটি আরো বেশি সমৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অনেকেই নিজের মধ্যেই সীমিত রেখে চলছেন।
প্রবাস প্রজন্মের উদ্দেশ্যে সাদ্দাম সেলিম বললেন, নতুন অভিবাসী হিসেবে আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে এবং সেটিই স্বাভাবিক। সেসব সমস্যার কথা প্রশাসন ও রাজনীতিকদের কাছে উপস্থাপনের একমাত্র ফোরামই হচ্ছে এলাকার জনপ্রতিনিধিগণের সাথে সম্পর্ক রাখা। রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্যে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বৃহৎ স্বার্থে ত্যাগের প্রয়োজন রয়েছে। আর এ স্বার্থটি হচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশিদের জন্য। সাদ্দাম উল্লেখ করেন, এই ভার্জিনিয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সেটি অনেকেই জানি না। ফলে বিদ্যমান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন অনেকে।
নোয়াখালী জেলা সদরের নবগ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের পুত্র সাদ্দাম সেলিম। মা-বাবার সাথে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ওয়াশিংটন ডিসিতে হ্রাসকৃত ভাড়ার একটি বাড়িতে বসতি গড়েছিলেন সাদ্দামের বাবা। এমনি অবস্থায় হঠাৎ একদিন দেখেন যে, বাড়ি থেকে তাদের সকল আসবাবপত্র ছুড়ে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। অর্থাৎ ভবনটিকে পুননির্মাণের জন্য একজন ক্রয় করেছেন। চোখের সামনেই সাদ্দামদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছু হরিলুট হয়, অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থেকে তা অবলোকনের বিকল্প ছিল না। অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ভয়াল বন্যার তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত সাদ্দাম পরিবার স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেও গৃহহারা হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পরিচিত এক প্রবাসী তাদেরকে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে নিজ বাসার বেসমেন্টে আশ্রয় দেন। সেখানে প্রায় দু’বছর বসবাসের পর স্বল্প আয়ের লোকজনের জন্যে অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং প্রোগ্রামে তারা একটি জরাজীর্ণ বাসায় উঠেন। সে এলাকার জনপ্রিয় ‘হ্যান্ডি ইন্ডিয়ান কুইজিয়ান রেস্টুরেন্ট’এর ডিশওয়াশারের কাজ শুরুর ২০ বছর পর তার বাবা শেফে উত্তীর্ণ হন এবং তার মা-ও একটি স্টোরে কাজ করে সংসার পরিচালনা করেছেন। সাদ্দাম ফলস চার্চ হাইস্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে গ্র্যাজুয়েশনের পর ২০১০ সালে নর্দার্ন ভার্জিনিয়া কম্যনিটি কলেজ থেকে এসোসিয়েট এবং ব্যাচেলর ডিগ্রি করেছেন। সেখানকার জর্জ ম্যাসোন ইউনিভার্সিটি থেকে এরপর ২০১২ সালে পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনে ব্যাচেলর এবং ২০১৫ সালে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করেছেন সাদ্দাম।
শিক্ষাজীবনেই দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের নিদারুণ দুঃখ-কষ্টের সাথে পরিচিত সাদ্দামের নির্বাচনী অঙ্গীকারেও ভার্জিনিয়াকে ঢেলে সাজানোর কথা রয়েছে। চিকিৎসা, হাউজিং, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে স্বল্প আয়ের মানুষদের উপযোগী করার কথা রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা যাতে সকলের নাগালের মধ্যে থাকে সে অঙ্গীকারও করেছেন নতুন প্রজন্মের এই প্রার্থী। রাজনীতি ও কম্যুনিটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে থাকা সাদ্দাম সাউথ এশিয়ান ফর আমেরিকা, ফেয়ারফ্যাক্স ইয়ং ডেমোক্র্যাটস’র ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস চেয়ার এবং প্রভিডেন্স ডিস্ট্রিক্ট ডেমোক্র্যাটিক কমিটির কো-চেয়ারও ছিলেন সাদ্দাম। তার কর্মজীবনের শুরুতে পেনফেড ক্রেডিট ইউনিয়ন, কিয়ার্নি অ্যান্ড কোম্পানি ছাড়াও ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট অব পিচের ফাইন্যান্সিয়াল কন্সালটেন্ট হিসেবে চাকরি করেছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট-বিজনেস কাউন্সিলেরও বোর্ড মেম্বার।
পার্শ্ববর্তী ম্যারিল্যান্ড স্টেট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক এবং ‘বাংলাদেশিজ ফর বাইডেন’র ন্যাশনাল পরিচালক আনিস আহমেদ এ সংবাদদাতাকে জানান, মার্কিন রাজনীতিতে সাদ্দামের উত্থানের ব্যাপারটি নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের আরো উৎসাহিত করবে। উল্লেখ্য, সাদ্দামের মতো বাংলাদেশ থেকে আসা শেখ রহমান, আবুল খান, নাবিলা ইসলাম, মাসুদুর রহমান কয়েক বছর আগে থেকে জর্জিয়া, নিউ হ্যামশায়ার এবং কানেকটিকাট স্টেট পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এখনো অবিবাহিত সাদ্দামের বড় ভাই এবং বোন ভার্জিনিয়ায় থাকেন। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মা কাজ থেকে অবসর নিলেও বাবা এখনও হ্যান্ডি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টেই কর্মরত। সাদ্দাম সকলের দোয়া চেয়েছেন কম্যুনিটির স্বার্থে যাতে নিবেদিত থাকতে পারেন।
Posted ৩:৪৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৩
nypratidin.com | Nabil Nizam
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
Sun | Mon | Tue | Wed | Thu | Fri | Sat |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | ||||
4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 |
11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 |
18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 |
25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 |